নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীর তাপমাত্রা দিন দিন কমছে। সেইসাথে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। ফলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও শীতজনিত বিভিন্ন অসুখে রোগির সংখ্যা বাড়ছে।
আজ রোববার (২৪ জানুয়ারি ২০২১) রামেক হাসপাতালের ২৩, ২৪ ও ২৬ নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এ ওয়ার্ডগুলোতে রোগির সংখ্যা বেড়েছে। খালি নেই হাসপাতালের বেড।
২৬ নং ওয়ার্ডে বেডসহ পুরো ফ্লোরজুড়ে রোগি দেখা গেছে। শিশু ওয়ার্ডে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ রুম হিটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ফ্লোরে থাকা রোগিদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেছে। ফ্লোরে রোগি থাকায় যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শীতজনিত সমস্যার জন্য দুই মাসের বাচ্চা নিয়ে এসেছেন আবু জাফর আলী। তিনি জানান, তার বোনের বাচ্চাকে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে অ্যাডমিট করা হয়েছে। কয়েকদিন থেকে তারা হাসপাতালে আছেন। এখন বাচ্চার অবস্থা অনেকটাই ভালো। কিন্তু তার রোগি কোনো বেড পাননি। তাকে মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে।
আরোও পড়ুন: রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগি ভর্তি হন। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে প্রতিদিন ৮০-৯০ জন রোগি ভর্তি হচ্ছে।
এদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। সর্দি-কাশি-জ¦র ও ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন বেশি। শনিবার ৮২ জন রোগি ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বহির্বিভাগেও রোগির সংখ্যা বেড়েছে। আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগি আসতেন। গত কয়েকদিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ জনে। শনিবার ৪৫১ জন রোগি বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস কমিউনিটি নিউজকে জানান, কয়েক দিন থেকে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার প্রকোপটাও বেশি। এতে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগি বাড়ছে। ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন: হাঁপানি, সর্দি-কাশি-জ্বর, ডায়রিয়াসহ এলার্জিজনিত সমস্যা নিয়ে রোগি ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের ১০, ২৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেড ও ফ্লোরে রোগি পূর্ণ হয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, শিশু ওয়ার্ডগুলোতে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কেননা শিশু ও বৃদ্ধরাই ঠান্ডাজনিত সমস্যায় বেশি আসছেন। আর এদের বেশ কিছু লক্ষণ করোনার লক্ষণের সঙ্গে মিলছে। গতদিন প্রায় ৭৫ জনের করোনা টেস্ট করানো হয়েছিলো। কিন্তু কারো করোনা পজিটিভ আসে নি। এবং এ পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে কোন শিশু বা বৃদ্ধ মারা যায় নি। তিনি আরো জানান, সকালে কুয়াশা পড়ছে। রোদেরও তেমন দেখা নেই। এ সময়টায় সকালে শিশুদের দেরি করে ওঠাতে হবে। ঠান্ডা লাগতে পারে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আর কোনো ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, রোববার (২৪ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আগেরদিন সর্বোচ্চ ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মৃদ্যু শৈত প্রবাহের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, ঘন কুয়াশা কাটলেও হালকা কুয়াশা পড়বে বেশ কয়েকদিন। দিনের তাপমাত্রা ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় সমান। আজ ভোর ৬ টায় রাজশাহীতে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ১০০% এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দু-এক জায়গায় হালকা কুয়াশা বৃষ্টির মতো পড়ছে। তবে, বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
কমিউনিটি নিউজ/এমএইচ